CCNA বর্তমানে সময়োপযুগী একটি ক্যারিয়ার বান্ধব প্রফেসনাল কোর্স। নেটওয়ার্কিং এর ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হলে এ কোর্সের বিকল্প নাই। যারা অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্র্রহী না , অফিস চাকুরী যাদের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন তাদের জন্য নেটওয়ার্কিং শিখার পরামর্শ দিব। শুধু নেটওয়ার্কিং শিখলেই হবেনা, সেই সাথে CCNA সার্টিফিকেটটিও অর্জন করতে হবে। আর এ সার্টিফিকেটটি থাকলে বাংলাদেশে সবচাইতে টপ চাকুরী সেক্টরগুলোতেই(ব্যাংক, টেলিকমিউনিকেশন, টিভি চ্যানেল, কর্পোরেট কোম্পানী) চাকুরীর ব্যাপারে আপনার চাহিদা তৈরি হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব বড় বড় সেক্টরগুলো নেটওয়ার্কিং এক্সপার্ট হিসেবে ঢুকতে হলে অ্যাডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ডটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। যেকোন সেক্টরে গ্রাজুয়েট হলেই হবে। শুধু CCNA সার্টিফিকেটটা থাকতে হবে।
যেকোন কোর্স করার পরিকল্পনার শুরুতে তার ভবিষ্যত কি, সেটা আগে জেনে নিয়ে তারপর কোর্সের জন্য ইনভেস্ট করা উচিত।
জানাবো, CCNA কোর্স শিখে কাজের সেক্টরঃ
১) টেলিকমিউনিকেশন সেক্টর:
বাংলাদেশে বর্তমানে ৭টি মোবাইল কোম্পানী এবং কয়েকটি বেসরকারী ল্যান্ডফোন কোম্পানী রয়েছে। এগুলোতে কিছু অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেকশন ছাড়া ৭০% লোককেই হতে হয় নেটওয়ার্কিং বিষয়ে দক্ষ। এ ক্ষেত্রে সব জায়গাতেই CCNA সার্টিফাইড লোককেই শুধু ইন্টারভিউয়ের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
এসব জায়গাতে আমার যে সকল বন্ধুরা চাকুরি করছেন, তাদের কাছে শুনলাম, একজন CCNA সার্টিফাইড লোককে এসব সেক্টরে চাকুরীতে শুরুর দিকে বেতন দেওয়া হয় ২০,০০০ টাকা – ৩০,০০০টাকা। এ বেতন দক্ষতা অনুযায়ি ১লাখ- ৩লাখ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।
২) টিভি চ্যানেলের আইটি বিভাগ:
প্রতিটি টিভি চ্যানেলের আইটি বিভাগ থাকে। আমরা টিভিতে যে ভিডিওগুলো দেখি তা দেখতে পাওয়ার পিছনে গুরু দায়িত্ব পালন করে থাকে টিভি চ্যানেলের আইটি বিভাগের নেটওয়ার্কিং টীম। এছাড়া পূরো অফিসের ভিতরের ইন্টারন্যাল নেটওয়ার্কিংটাও তাদের কাজ। ক্রিয়েটিভ আইটিতে যোগ দেওয়ার আগে আমি এনটিভিতে জয়েন করি। তাই সেখানের বেতনের ব্যাপারগুলোতে ধারণা দিতে পারব। সেখানের আইটি বিভাগে প্রায় ২০ জনের টীম। প্রত্যেকে সিসিএনএ সার্টিফাইড। CCNA সার্টিফাইড ছাড়া কেউ সেখানে চাকুরীর জন্য আবেদন করতেই পারবেনা। সেই পোস্টে এন্ট্রি লেভেলের বেতন হয়ে থাকে ১৫,০০০টাকা -২০,০০০টাকা। যারা আরেকটু অভিজ্ঞ তাদের বেতন ৬০,০০০টাকা – ৭০,০০০টাকাও দেখেছি।
৩) ব্যাংকের আইটি বিভাগ:
বাংলাদেশের মানুষদের জন্য সবচাইতে আকাংখিত চাকুরীর সেক্টরগুলোতে সবার প্রথমেই থাকে ব্যাংক। তারপর আসে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টর, তারপর টিভি চ্যানেল। প্রতিটি ব্যাংকে প্রচুর নেটওয়ার্কিং এক্সপার্ট থাকে। আর তারাই ব্যাংকে ডাটা সেন্টার, অনলাইন ব্যাংকিং, বুথ , কার্ড ডিভিশনগুলো মেইনটেইন করে। বিশাল সংখ্যক নেটওয়ার্কিং এক্সপার্ট প্রয়োজন একটি ব্যাংকের জন্য। আমার ১জন বন্ধু ব্রাক ব্যাংকের কার্ড সেকশনে রয়েছে। তার এ চাকুরীটির জন্য আলাদাভাবে CCNA কোর্স সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হয়েছে। তার বেতন শুরু হয়েছিল ২০,০০০টাকা দিয়ে। এখন ৫বছর পর সে পাচ্ছে ৪০,০০০টাকা।
৪। আইএসপি কোম্পানী:
যারা ইন্টারনেট সার্ভিস কোম্পানী তাদেরকে বলে আইএসপি কোম্পানী। যেহেতু এসব কোম্পানী ইন্টারনেট সার্ভিস দেয়। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র নেটওয়ার্কিং এক্সপার্টরাই চাকুরী করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চাকুরীর জন্য CCNA সার্টিফিকেট ছাড়া কোন প্রকার আবেদন করার সুযোগ নাই। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর শুরুতে বেতন হয় ১৫,০০০টাকা-২০,০০০টাকা। দক্ষতা অর্জনের সাথে বেতনও অনেক বাড়তে থাকে।
৫। বিভিন্ন ডাটা সেন্টারঃ
বাংলাদেশেও এখন ডাটা সেন্টার তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে পত্রিকার কল্যানে জেনেছি বাংলাদেশের গাজীপুরে হাইটেক পার্কের আওতাধীন ডাটাসেন্টার তৈরি হচ্ছে, যা বিশ্বে ৫ম বৃহৎ ডাটা সেন্টার। এ ডাটা সেন্টারের জন্য বিশাল সংখ্যক নেটওয়ার্কিং এক্সপার্টের চাকুরির ব্যবস্থা হবে। শুধু তাই নয়, সেটার কাজ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশের তরুনদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং শিখার এবং CCNA সার্টিফাইড হওয়ার ধুম পড়ে যাবে। এদেশে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ছোট ছোট ডাটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানেও প্রচুর নেটওয়ার্কিং এক্সপার্টের প্রয়োজন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে এন্ট্রি লেভেলের বেতন ধরা হয় ২০,০০০টাকা। অভিজ্ঞদের বেতন ১লাখ টাকা পযন্ত হয়ে থাকে।
৬। কর্পোরেট কোম্পানীর আইটি বিভাগঃ
খুব কম অফিস আছে যেগুলো ইন্টারনেট ছাড়া কিংবা কম্পিউটার ছাড়া চালানো সম্ভব। যে সব অফিসে ১৫টা কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার রয়েছে সেসব কোম্পানীতেই নেটওয়ার্কিং এক্সপার্ট প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিটা গার্মেন্টস কোম্পানী থেকে শুরু করে মোটামুটি বড় প্রতিটা কোম্পানীতেই কয়েকজন নেটওয়ার্কিং এক্সপার্ট প্রয়োজন। কোম্পানী কত বড়, সেটির উপর বেতন নির্ভর করে এসব নেটওয়ার্কিং এক্সপার্টদের। আমার চাচাতে ভাই প্রাণ কোম্পাণীতে নেটওয়ার্কিং এক্সপার্ট হিসেবে চাকুরী করত। সেটি তার ১ম চাকুরী ছিল। সেখানে তাকে বেতন দেয় ১৫,০০০টাকা্। এখানে চাকুরীর জন্য তাকে CCNA সার্টিফিকেটসহ আবেদন করতে হয়েছিল।
উপরে শুধুমাত্র লোকাল চাকুরীর কথাগুলো উল্লেখ করলাম। অনলাইনেও নেটওয়ার্কিং বিষয়ক জব রয়েছে এগুলোর চাহিদাও ব্যাপক।
নেটওয়ার্কিং সম্পর্কিত কাজ শিখে অনলাইনে আয়ঃ
মার্কেটপ্লেসে এ সম্পর্কিত কাজ করে এরকম কয়েকজনের প্রোফাইল লিংক শেয়ার দিচ্ছি।
এ লিংকগুলো ভিজিট করে দেখুন, তাদের ঘন্টা অনুযায়ি রেট কত? তাহলেই আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে চাহিদা বোঝা যাবে সহজে। ইল্যান্সে বর্তমানে নেটওয়ার্কিং সম্পর্কিত কতগুলো কাজ আছে সেটি জানার জন্য https://www.elance.com/trends/skills_central এ যেতে হবে।
উন্নত দেশগুলো CCNA সার্টিফাইডদের জন্য চাকুরীর স্বর্গভুমি
আবার যারা অন্যদেশে যাচ্ছেন ১টা ভাল ক্যারিয়ার গড়ার উদ্দেশ্যে। তারা যাওয়ার আগে CCNA সার্টিফাইড হয়ে তারপর যেতে পারেন। অনেক ভাল একটা অবস্থান তাহলে তৈরি করতে পারবেন। আমাদের দেশ থেকে যারাই অন্যদেশে যায়, তারা সাধারণত স্কীলড চাকুরিগুলো করেনা। কিন্তু যদি CCNA বিষয়ে স্কীলড হয়ে তারপর যেয়ে থাকেন, তাহলে খুব ভাল একটা চাকুরি খুব সহজেই যোগাড় করতে পারবেন। বেতন কিরকম হতে পারে, সেটি আমি এখানে উল্লেখ করবনা। চাকুরীর বিজ্ঞাপনের লিংক শেয়ার করব।
১) মালয়শিয়াতে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিঃ
২) আমেরিকাতে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিঃ
৩) সিংগাপুরে চাকুরির বিজ্ঞপ্তিঃ
সময়টাকে নষ্ট না করে নিজেকে স্কীল করে রাখুন। তাহলে বেকার হিসেবে ভবিষ্যতে কান্না করতে হবেনা। বর্তমান বিশ্ব শুধুমাত্র স্কীলব্যক্তিদেরকেই চিনে। অদক্ষ ব্যক্তির দিকে করুণা করে অনেকে তাকাতে পারে, কিন্তু সেটুকু পযন্ত। নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রস্তুত না করার ব্যাপারে হয়তা আপনার অনেক ধরনের তুচ্ছ কারণ থাকতে পারে। সেকারণগুলো আপনার নিজের জন্যই ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসবে।
Credits : প্রিয়